স্বদেশ ডেস্ক:
করোনা পরিস্থিতিতে সীমিত আকারে গণপরিবহন চললেও থেমে নেই সড়ক দুর্ঘটনা। গেল জুনে দেশে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ২৯৭টি। এতে হতাহত হয় ৭০৯ জন। নিহত ৩৬১ জনের মধ্যে ৩২ শিশু ও নারী ছিল ৫৭ জন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। মে মাসের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি উভয়ই বেড়েছে। মে মাসে ২১৩টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ২৯২ জন। ওই হিসাবে জুনে দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৪৩ এবং প্রাণহানি ২৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর এককভাবে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়।
দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাটির গতকাল রবিবার পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়Ñ ১০৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯৪ জন, যা মোট নিহতের ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। আর দুর্ঘটনার হারে সেটি ৩৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এসব ঘটনায় পথচারী নিহত হয়েছেন ৭৬ জন, যা মোট নিহতের ২১ দশমিক ০৫ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৯ জন, অর্থাৎ ১৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ সময়ে ১১টি নৌ দুর্ঘটনায় ৫৬ জন নিহত ও ২৩ জন নিখোঁজ হয়েছেন। ছয়টি রেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা সাত।
সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি এ প্রতিবেদনে দেখা যায়, দুর্ঘটনায় নিহত ট্রাকযাত্রী ২৩, বাসযাত্রী ১২, পিকআপ যাত্রী ১০, কাভার্ডভ্যান যাত্রী দুই, মাইক্রোবাস যাত্রী নয়, প্রাইভেটকার যাত্রী ১১, অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী চার, লরিযাত্রী তিন, সিএনজি যাত্রী ১২, ইজিবাইক-অটোরিকশা যাত্রী ৩৫, নসিমন-করিমন যাত্রী ২৩, ভটভটি-আলমসাধু যাত্রী ২৫, রিকশা ও রিকশাভ্যান যাত্রী ১৬ এবং বাইসাইকেল আরোহী ছয়জন। তাদের মধ্যে আটজন শিক্ষক, এক শিক্ষা কর্মকর্তা, এক প্রকৌশলী, দুজন স্বাস্থ্যকর্মী, একজন পুলিশ সদস্য, এক গ্রামপুলিশ সদস্য, এক বিজিবি সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার একজন, দুজন স্থানীয়
রাজনৈতিক নেতা, চারজন মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, দুজন ব্যাংকার, সাতজন স্থানীয় ব্যবসায়ী, নয় জন পোশাক শ্রমিক, তিনজন এনজিও কর্মী, ১১ জন সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী এবং ৪৩ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৩১টি জাতীয় মহাসড়কে (৪৪ দশমিক ১০ শতাংশ), আঞ্চলিক সড়কে ৯২টি (৩০ দশমিক ৯৭ শতাংশ), গ্রামীণ সড়কে ৫৩টি (১৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ) এবং ২১টি (৭ দশমিক ০৭ শতাংশ) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে। আবার মোট ঘটনার ৬৩টি (২১ দশমিক ২১ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৮৮টি (২৯ দশমিক ৬২ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৭৮টি (২৬ দশমিক ২৬ শতাংশ) পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা, ৫৯টি (১৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত এবং অন্যান্য কারণে ঘটেছে নয়টি (৩ দশমিক ০৩ শতাংশ)। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ২৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ দায়ী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-জিপ-অ্যাম্বুলেন্স ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ৭ দশমিক ১২, মোটরসাইকেল ২৫ দশমিক ৩০, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা) ৯ দশমিক ৫৮, নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু ১২ দশমিক ৫৩, রিকশা-বাইসাইকেল ৫ দশমিক ৬৫ এবং অন্যান্য (টমটম-পাওয়ারটিলার, ধান মাড়াইয়ের মেশিন গাড়ি) ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের সংখ্যা ৪০৭টি। এর মধ্যে ট্রাক ৮১, বাস ২৯, কাভার্ডভ্যান ১৩, পিকআপ ২২, লরি ছয়, ট্রলি সাত, ট্রাক্টর ছয়, মাইক্রোবাস ছয়, প্রাইভেটকার নয়, অ্যাম্বুলেন্স তিন, বিজিবির পিকআপ এক, আনসার ব্যাটেলিয়ন জিপ এক, পোশাক শ্রমিক বহনকারী বাস এক, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাস এক, পাওয়ারটিলার এক, ধান মাড়াইয়ের মেশিন গাড়ি এক, মোটরসাইকেল ১০৩, বাইসাইকেল ছয়, নসিমন-করিমন ২৪, ভটভটি-আলমসাধু ২৭, ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা ৩৯, টমটম তিন এবং রিকশা ১৭টি। সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৭ দশমিক ৪০, সকালে ২৮ দশমিক ৬১, দুপুরে ২২ দশমিক ৫৫, বিকালে ১৭ দশমিক ৮৪, সন্ধ্যায় ৮ দশমিক ৭৫ এবং রাতে ১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। আবার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান বলছেÑ ঢাকায় ২১ দশমিক ৫৪, রাজশাহীতে ২০ দশমিক ৫৩, চট্টগ্রামে ১৪ দশমিক ৪৭, খুলনায় ১০ দশমিক ৭৭, বরিশালে ১০ দশমিক ৪৩, সিলেটে ৩ দশমিক ৭০, রংপুরে ১০ দশমিক ১০ এবং ময়মনসিংহে ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে। বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে ঢাকা বিভাগে, ৬৪টি দুর্ঘটনায় ৮১ জন নিহত। কম সিলেট বিভাগে, ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত। একক জেলা হিসাবে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে, ১৫টি দুর্ঘটনায় নিহত ২১ জন। সবচেয়ে কম পিরোজপুরে, একটি দুর্ঘটনায় একজন নিহত।
প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়েছেÑ ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি; গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি।